বরিশালবাসীর জাতিসংঘ জয়ের সুচনা -
পর্যটন নগরীর সুচনা
নিজের জন্মভূমি, ধান, নদী, খালের বরিশালের জন্য মায়াভরা এক মেয়ের চঞ্চলা দৃষ্টি পড়ল এক সময়ের মায়াবী, সুন্দর অথচ বর্তমানে মৃতপ্রায়, করুন এক খালের দিকে। যে খালের তীরের এক সপ্নের সংসারে, এক চপলা নারী একদিন বধু বেশে এসেছিল পাল তোলা নৌকায় চরে। কিন্ত আজ সেই স্রোতস্বিনী বহমান খালের প্রাণকে মানুষের অগ্রাসি লোভ শুষে নিয়ে করে দিয়েছে রিক্ত, প্রাণহীন। খালের টলটলে জলের গতিকে স্তব্ধ করে দিয়ে বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে গিয়েছে ইট, কাঠ আর পাথরের কঠিন দেয়াল। মানুষের আবেগকে দলিত করে স্থান করে নিয়েছে মানুষের অসীম লোভ। সুন্দরের এই করুন মৃত্যু দেখে তার প্রতিবাদে দেয়া হল ছোট্ট এক ফেসবুক পোস্ট, এমন এক ফেসবুক গ্রুপে, যেখানে আছে ভাবুক, আছে প্রতিবাদী, আছে সংগঠক, আছে নেতা, আছে দেশের জন্য দরদ ভরা অতন্দ্র প্রহরী, আছে উদ্যম, আছে স্পৃহা, আছে নতুনকে জানার এবং জয় করে নেবার অদম্য সাহস। ছোট্ট একটি পোস্ট, তেমন কিছু বিষয় নয় এটা। এরকম হাজারো, লক্ষ, কোটি পোস্ট প্রতিদিন দেয়া হয় অনলাইনে। কিন্ত প্রতিবাদ আর আকাংখার সেই পোস্ট হয়ে উঠল এক ক্ষুদ্র অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, যা ছড়িয়ে পড়ল মন থেকে মনে, প্রান থেকে প্রানে, পরিনত হল এক উজ্জ্বল আলোকিত দাবানলে। সরব হয়ে উঠল প্রতিবাদী জনতার মৌনতা, শুরু হল এক অবিস্মরণীয় গনজাগরনের। অধিকার আদায়ের সেই মিছিলে যুক্ত হতে শুরু করল তরুন, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ। নারী, পুরুষ, বর্ণ, গোত্র, ধর্ম আর জাতিভেদ ভুলে, কাধে কাধ মিলিয়ে, যেন সমগ্র অঞ্চল এক অচ্ছেদ্য পরিবারের বন্ধনে শুরু করল অভিযান । নাম হল "জেল খাল অভিযান"। জনগনের সম্পত্তি দখলের চিরচরিত প্রথার বিরুদ্ধে এবার জনগন মাঠে নামল না, বরং উঠে গেল অনলাইন সাইবারস্পেসে। ঊর্ধ্ব আকাশে শুরু হল প্রতিবাদের গোলাবর্ষণ, লোভ, অগ্রাসন, অন্যায় আর দখলবাজীর বিরুদ্ধে। ছড়িয়ে গেল ফেসবুকের প্রফাইল থেকে প্রোফাইলে । জাগল জনগন, জাগল প্রশাসন, জাগল আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা। প্রাণহীন, স্রোতস্বিনী, অভিমানী খালে আবার লাগল প্রানের ছোঁয়া, আবার ডিঙ্গি নৌকাতে করে সপ্নের পসরা সাজিয়ে ফেরি করে শুরু হল সুজন মাঝিদের আনাগোনা। সুচিত হল এক বিপ্লবের। যা জেলার, বিভাগের, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে গেল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। আলোচনায় উঠল পৃথিবীর সমস্ত দেশগুলোর সম্মিলনস্থান - জাতিসংঘে। আলোচিত হল বরিশাল নামের এক ছোট্ট অঞ্চলের সচেতন মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের গল্প। জেলার মানচিত্র পার হয়ে প্রবেশ করল দেশের প্রধানের অফিস কক্ষে, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের a2i প্রতিনিধি দলের সহায়তায় এই অবিস্মরণীয় আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে গেল জাতিসংঘে। পৃথিবীর দুতের ছুটে আসল অবাক বিস্ময়ে- জানতে, বুঝতে, দেখতে যে কিভাবে স্বল্প আয়, স্বল্প টেকনোলোজি নিয়ে এক দল মেধাবী, উদ্যমী মানুষ অধিকার আদায়ের এক নতুন শিক্ষা দিল সমস্ত পৃথিবীবাসিকে। আজ তারা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অকুণ্ঠ ভাবে বরিশাল বাসির এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে। অঙ্গিকার করেছেন যে, তারা জাতিসঙ্ঘের মাদ্ধমে বরিশালবাসির এই সাফল্যকে ছড়িয়ে দেবেন পৃথিবীর আনাচে কানাচে, জনগনের অধিকার আদায়ের আদর্শ হিসেবে। এটা আজ শুধু আমাদের বরিশালবাসীর জন্য গর্ব আর অহঙ্কেরর বিষয় নয়, এই অর্জন আমাদের সোনার বাংলার আপামর জনসাধারনের।
বরিশালের জনগন সব সময়েই যুগের যে কোন উপকারী বিষয়কে খুব সহজে আত্মস্থ করতে অভ্যস্ত, এটা হয় তাদের উদার মানসিকতা আর নতুনকে পরিক্ষা করে নিজেদের এবং জনগনের ভালর জন্য ব্যবহার করার পরোপকারী মানসিকতা থেকে। যার কারনে বরিশাল জন্ম দিয়েছে বহু সাহসী, উদ্ভাবনী সন্তানদেরকে, যারা পৃথিবীর বুকে বিচরন করতে ভালবাসে নির্ভয় চিত্তে, আত্মবিশ্বাসের সাথে। ইন্টারনেট, ডিজিটাল টেকনোলোজি আমাদের দেশে ব্যবহার খুব বেশিদিন নয়। আর বরিশালে ইন্টারনেটের থ্রি জি স্পিড এসেছে মাত্র কিছুদিন আগে। অথচ বরিশালের আগে অন্যান্য অনেক জেলায় হাইস্পিড ইন্টারনেট চলে গিয়েছিল। কিন্ত সেই পিছনে পড়া অবস্থা থেকেই বরিশালবাসী নিজেদের যোগ্যতায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের জনগনের অধিকার আদায়ে এমন এক নজীর সৃষ্টি করেছে, এনেছে একতার আর অধিকার আদায়ের এক নতুন আলো, যেঁটা দেখে পুরো পৃথিবী বিস্মিত এবং স্রদ্ধাবনত।
বরিশাল, ইংরেজদের ভাষায়, সমস্ত পৃথিবীর কাছে পরিচিত "VENICE OF THE EAST" বলে। কোমল হৃদয়, কবি, সাহিত্যিক, আলেম, ভাষা সৈনিক, দুর্জয় মুক্তিযোদ্ধা, উদার মনা, সাহসী এরকম হাজারো লক্ষ গুনের অধিকারীদের আবাস ভূমি । বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক বড় এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বরিশালের সাহসী সন্তানেরা জাতীকে পথ দেখিয়েছে নিজের উন্নত মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে। আর এই একবিংশ শতাব্দীর টেকনোলোজির জুগের বরিশালবাসী আবারও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করেছে নতুন এক কাজের মাধ্যমে, যেই কাজ এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পর্যন্ত এক গন বিপ্লবের মর্যাদা পেয়েছে। যে বিপ্লবকে এবং বিপ্লবের প্রেরনার উৎস বরিশালবাসীকে রোল মডেল মানতে আজ ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ জাতিসংঘ থেকে বিদেশী প্রযুক্তিবিদগন ছুটে এসেছে আমাদের এই ধান, নদি, খালের প্রিয় মাতৃভূমিতে, সন্মানের সাথে অভিবাদন জানাতে বরিশালের প্রাণখোলা , অতিথিপরায়ন মানুষদেরকে এবং শিখতে এসেছে তাদের প্রেরনার উৎসকে । উন্মাতাল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সাগর কিভাবে পাড়ি জমায় ধান, নদী, খালের সেই দুরন্ত সুজন মাঝি, শুনতে এসেছে সেই প্রেরনার গল্প।
আর সবচাইতে সুখবর হচ্ছে যে, জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল যখন জাতিসংঘে আমাদের দেশের এই বীরত্ব আলোচনা করবে, তখন সমস্ত পৃথিবীবাসীর আগ্রহের সৃষ্টি হবে বরিশাল, বাংলাদেশকে নতুন করে জানার, চেনার। আর এর ফলে খুলে যেতে পারে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।পৃথিবীর মধ্যে টুরিস্টদের জন্য সবচাইতে আকর্ষণীয় একটি বিষয় আমাদের বরিশালের কুয়াকাটায় আছে, যেটা হল, কুয়াকাটাই পৃথিবীর এমন এক সৈকত, যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, দুটোই দেখা যায়। কক্সবাজারে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এরকম আরও বহু স্পেশাল বিষয় আছে আমাদের দেশের। যেমন আছে মায়াবী সন্ধ্যা।
আমরা যদি সেগুলোকে সুন্দর ভাবে বহির্বিশ্ব তথা সমগ্র রিয়েল এবং অনলাইন জগতে ভালভাবে মার্কেটিং প্রমোশন এবং উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ পরিচিত হতে পারে পৃথিবীর সবচাইতে আকর্ষণীয় টুরিস্ট কান্ট্রি হিসেবে। কাজেই এখন আমাদের কাজ হল যথাযথ প্রস্তুতি নেবার এবং আমাদের পরিচিতিকে বিশ্ববাসীর সামনে নান্দনিক ভাবে উপস্থাপন করার।আমাদের উপস্থাপন যেন রুচিশীল এবং সুন্দর হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরী, যেন সমগ্র পৃথিবী জানতে পারে দুর্জয় বাঙ্গালীর বিশ্ব জয়ের উপাখ্যান। সবাইকে মহান স্রস্টার নামে, ভাল নিয়তে, নিজের, দেশের, জনগনের উন্নতির নিয়তে প্রস্তুতি নেবার আহব্বান। কারন আল্লহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন যে, নিশ্চয়ই প্রত্যেক কাজের কর্মফল তার নিয়তের উপরেই নির্ভর করে। সবাইকে মর্যাদাশীল ও উন্নত বাংলাদেশের অগ্রিম শুভেচ্ছা ।
![]() |
আমার বরিশাল. আকাশে যেন সোনা রঙের আগুনের দুর্বার বিচরন - Glamorous Barisal.With Colors of Gold. |